পরিবার ও চিকিৎসা

মাদক নির্ভরশীল চিকিৎসায় পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মাদকাসক্তি চিকিৎসায় পরিবারের অংশগ্রহণ অত্যন্ত নগণ্য। চিকিৎসা ফলপ্রসূ হতে হলে চিকিৎসায় পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরী। পরিবারকে সচেতন, এক পরিবারের কাছ থেকে অন্য পরিবারের শিক্ষাগ্রহণ, পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করা, চিকিৎসা প্রাপ্ত রোগীর প্রতি করণীয় ও মনোভাব ইত্যাদি বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মিশন পরিচালিত কেন্দ্রগুলোতে পারিবারিক সভা বা কাউন্সেলিং এর আয়োজন করা হয়ে থাকে।

নির্ভরশীল ব্যক্তির কারণে যখন অভিভাবকরা চরম হতাশায় ভোগেন, কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না, জীবন যখন অনেক কঠিন হয়ে আসে তখনই তাদের অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে পারিবারিক সভা বা কাউন্সেলিং অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। পারিবারিক সভাগুলোতে একে অন্যের অনুভূতিগুলো শোনেন এবং কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যায় তা তারা আলোচনা করেন। খোলা মনে নিজেদের দুঃখ দুর্দশার কথা বলেন, সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে আলাপ করেন এবং উপকৃত হন। সকলে সকলের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সমস্যাগ্রস্থ পরিবারে সহ-নির্ভরশীলতা বিরাজ করে। সমস্যাগ্রস্থ পরিবার বলতে এমন একটি পরিবারকে বোঝায় যেখানে দ্বন্দ্ব, অপব্যবহার, প্রায়ই সন্তানের প্রতি অবহেলা এবং সার্বিকভাবে অসামঞ্জস্যতা বিরাজমান। এখানে সমস্যাগ্রস্থ পরিবারের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখানো হলো যা সহ-নির্ভরশীলতা তৈরীতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

  • সমস্যা যে আছে তা স্বীকার করে না।
  • সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে না।
  • আবেগ ও চাহিদা প্রকাশ না করার বা চাহিদাকে অবজ্ঞা করার শিক্ষা দেয়া হয়।
  • কিভাবে টিকে থাকা যায় সেই শিক্ষা দেয়া হয়।
  • পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং আস্থা হারায়।
  • শিশু ও যুবকদের ক্ষেত্রে আবেগ বিকাশে বিঘœ ঘটে।
  • শুধুমাত্র নির্ভরশীল ব্যক্তির উপরে সমস্ত মনোযোগ দেয়া হয়।
  • আমরা সহ-নির্ভরশীলতা (ঈড় –ফবঢ়বহফবহপু) কে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা পরিকল্পনা করে থাকি। তার মধ্যে পারিবারিক কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা রয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার ক্ষেত্রে আফটার কেয়ার বা চিকিৎসা পরবর্তী সেবা প্রদানের মাধ্যমে সহ-নির্ভরশীলতা চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
    পারিবারিক সভায় যে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তা হল:

  • Co -dependency (সহ-নির্ভরশীলতা) সম্পর্কে পরিবারকে সচেতন করা।
  • Addictive Behavior (সক্রিয় ব্যবহার/ভূমিকা) সম্পর্কে পরিবারকে সচেতন করা।
  • Interpersonal Relationships (আন্তঃ সম্পর্ক) তৈরীতে সহযোগিতা করা ।
  • পরিবারের সদস্যদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে সহযোগিতা করা।
  • সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করা।
  • মাদক নির্ভরশীলদের চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করা।
  • মাদক নির্ভরশীল ও সুস্থতাপ্রাপ্তদের যত্ন সম্পর্কে সচেতন করা।